প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস

image-not-found

ঝিনাইদহের মহেশপুর ও যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ঐতিহাসিক কাটগড়া বাওড়ের তীরবর্তী অঞ্চল সমূহই হচ্ছে 'কাটগড়া'। এলাকায় বা স্থানীয়ভাবে এই অঞ্চলটি বিভিন্ন নামে পরিচিত হলেও ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনুসারে অঞ্চলটির প্রকৃত নাম 'কাটগড়া'। আর এই কাটগড়া নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস। যেটা হয়ত আমাদের অনেকেরই অজানা ।

দীর্ঘ ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের সাক্ষী এই 'কাটগড়া'। ইংরেজরা এদেশে এসেছিলো ব্যবসা-বাণিজ্য করতে। তাদের ব্যবসায়ীক বুদ্ধি ছিলো তীক্ষ্ণ । ক্রমান্বয়ে তারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে । ইতিহাসবেত্তাদের মতানুসারে, ১৭৭০ থেকে ১৭৮০ সালের মধ্যে ইংরেজ আমলে বাংলাদেশে নীল চাষ শুরু হয় । বাংলার পলি সমৃদ্ধ মাটি চিরটাকালই ফসল উৎপাদনের জন্য ছিলো উপযোগী। আর তাই বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে নীল চাষও হত। ইংরেজ বণিকদের ছিলো নীলের প্রতি ব্যাপক টান। কারণ, সে সময়ে নীল ছিলো একটি উল্লেখযোগ্য অর্থকরী ফসল। ঐ সময়ে নীল ব্যবসা ছিলো খুবই লাভজনক। বস্তুত, শিল্পের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কাপড় রং করার জন্য ব্রিটেনে নীলের চাহিদা খুব বেড়ে যায়। তাছাড়া অ্যামেরিকার ব্রিটিশ উপনিবেশগুলো স্বাধীন হয়ে যাওয়ার কারণে ইংরেজ বণিকদের সেখানকার নীল চাষ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাংলা হয়ে ওঠে নীল সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র।

নীল চাষের জন্য নীলকররা কৃষকের সর্বোৎকৃষ্ট জমিটি বেছে নিত। এমনকি তারা কৃষকদের নীল চাষের জন্য অগ্রিম অর্থ গ্রহণে (দাদন) বাধ্য করতো। আর একবার এই দাদন গ্রহণ করলে সুদ-আসলে যতই কৃষকরা ঋণ পরিশোধ করুক না কেন, বংশপরম্পরায় কোনো দিনও তাদের ঋণ শোধ হতো না। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা বাংলার বিভিন্ন স্থানে 'নীলকুঠি' স্থাপন করেন। কাটগড়া বাওড়ের তীরে ছিলো তাদের একটি 'নীলকুঠি'। যেটার নাম ছিলো 'কাটগড়া কনসার্ন'। আজ যেখানে কাটগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান, ঠিক সেই স্থানেই ছিলো এই নীলকুঠি।

তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম নীলকুঠি ছিলো এই কাটগড়া। ইতিহাসবিৎদের মতে, এখানে প্রায় ৭৩ হাজারের অধিক শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। অত্র এলাকার কৃষকরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইংরেজদের কথামতো নীল চাষ করে কাটগড়া বাওড়ের নৌকা বোঝায় করে নিয়ে আসতো কাটগড়া কনসার্নে। যেসকল কৃষকরা ব্রিটিশ বণিকদের কথা মতো চলতো না, তাদেরকে কঠিন বিচারের মুখোমুখি হতে হতো। ঐ কাটগড়া কনসার্নিংয়ে চলতো তাদের বিচারকার্য্য।

এলাকার বৃদ্ধ/জনমানুষের মাঝে কথিত আছে যে, এই কাটগড়া কনসার্নিংয়ের পাশে না-কি একসময় মস্ত বড়ো একটা কূপ ছিলো। সেই কূপে সংগৃহীত নীল জ্বালিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হতো। এবং যেসকল চাষীরা তাদের কথামতো না চলে বিদ্রোহ করতো, তাদের ধরে নিয়ে এসে প্রত্যেকের মাথায় কাদা দিয়ে বীজ বপন করা হতো। যাদের মাথায় চারা গজাতো, তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হতো। আর যাদের গজাতো না, তাদের প্রতি চালানো হতো অকথ্য নির্যাতন।

এভাবে ইংরেজরা ক্ষমতাবলে নীল চাষীদেরকে সারাদেশের ন্যায় কাটগড়াতেও অভিনব পদ্ধতিতে নির্যাতন চালাতো। এরা এতটাই নিষ্ঠুর আর বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো যে, অবাধ্য নীলচাষীকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি। শেষ পর্যন্ত দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নীল চাষীরা ১৮৫৯ সালে প্রচণ্ড বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। ইতিহাসে সেটি 'নীল বিদ্রোহ' নামে পরিচিত। আর উপমহাদেশে এই নীল বিদ্রোহ সর্বপ্রথম শুরু হয় যশোরে। যার নেতৃত্বদান কারী ছিলেন নবীন মাধব ও বেণী মাধব নামের দুই ভাই । আর চৌগাছায় নীল বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস নামের দুই ভাই। সেই বিদ্রোহের হাওয়া এই অঞ্চলের কৃষকদের মাঝেও বইতে থাকে। তীব্র আন্দোলন আর জনরোষের মুখে পড়ে ইংরেজরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। শেষ পর্যন্ত বাংলার সংগ্রামী কৃষকদের জয় হয়। বিদ্রোহের মুখে পড়ে ১৮৬১ সালে ইংরেজ সরকার 'ইন্ডিগো কমিশন' বা নীল কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের সুপারিশের উপর ভিত্তি করে নীল চাষকে কৃষকদের 'ইচ্ছাধীন' বলে ঘোষণা করা হয়, এবং 'ইন্ডিগো কন্ট্রাক্ট' বাতিল করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নীল বিদ্রোহের অবসান হয় । (পরবর্তীতে কৃত্রিম নীল আবিষ্কৃত হওয়ায় ১৮৯২ সালে নীল চাষ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়)।

আর এভাবেই সারাদেশের মতো ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তি ঘটে 'কাটগড়া কনসার্নের। থেকে যায় নির্মম আর নৃশংস এক স্মৃতিচিহ্ন। বৃটিশদের বিতাড়নের মধ্যে কাটগড়া কনসার্নিং অকার্যকর হলেও কালক্রমে মানুষের মুখে মুখে এই স্থানটির নাম সেই থেকে 'কাটগড়া'ই রয়ে যায়। বর্তমানে এই 'কাটগড়া' নামানুসারে এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে। যেমন, কাটগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাটগড়া কলেজ (বর্তমানে ডাঃ সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ, কাটগড়া ), কাটগড়া কিন্ডারগার্টেন, কাটগড়া কুঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ও এস.কে কম্পিউটার এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (সাহাপুর-কাটগড়া কম্পিউটার অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার)। বর্তমানে উক্ত প্রতিষ্ঠান গুলো এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করেছে। সেই সাথে ঐতিহ্যবাহী ‘কাটগড়া বাওড়’ তো রয়েছেই।

সভাপতির বাণী

image-not-found

চৌগাছা উপজেলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ কাটগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় । ১৯৭৪ সাল থেকে বিদ্যাপীঠটি শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রণি ভূমিকা পালন করে আসছে। ইতিমধ্যে এই বিদ্যাপীঠে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় সেরা সাফল্য অর্জন এর মাধ্যমে শিক্ষাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।শিক্ষার পাশাপাশি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে বিদ্যালয়টি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটটিতে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমি এ বিদ্যালয়ের সমৃদ্ধি ও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।

প্রধান শিক্ষকের বানী

image-not-found

জনাব মোঃ তবিবার রহমান প্রধান শিক্ষক

চৌগাছা উপজেলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ কাটগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় । ১৯৭৪ সাল থেকে বিদ্যাপীঠটি শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রণি ভূমিকা পালন করে আসছে। ইতিমধ্যে এই বিদ্যাপীঠে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় সেরা সাফল্য অর্জন এর মাধ্যমে শিক্ষাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।